‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ সত্ত্বেও ছাত্রলীগের ব্যানারে বুয়েটে সভা! বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা 

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাফেটেরিয়ায় ছাত্রলীগের ব্যানারে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। সেই সূত্র ধরে ছাত্রলীগের এই কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পরও এই কর্মসূচি আয়োজনে অনুমতি কীভাবে পেল- তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর গত দুই বছরে শোক দিবসে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিল বুয়েট কর্তৃপক্ষ। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এবং অংশগ্রহণও ছিল। কিন্তু এবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ব্যানারে অনুষ্ঠান হওয়ায় তা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছে না।

সাবেক ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আমরা জানি বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। আমাদের প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। সবাই সত্তর-আশির দশকের নেতারা ছিল। আমরা সবাই সাবেক।’

এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক (ডি এস ডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, অনুমতি নেওয়ার সময় তারা জানিয়েছে, তারা সাবেক শিক্ষার্থী, পুনর্মিলনী করবে ক্যাম্পাসে। সে কারণে আমরা অনুমতি দেই। কিন্তু তারা বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে প্রোগ্রাম করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়।

প্রোগ্রাম শেষে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা খুনি! খুনি! বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।

পরে রাতে পৌনে ৯টার দিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করেন।

এসময় তারা বলেন, ১৯৭৫ সালের এই মাসের ১৫ তারিখ বাঙালি হারায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেই আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে গড়ে তুলতে। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ এবং সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন নিশ্চিত করা সকল শিক্ষার্থীর মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যেই ছাত্ররাজনীতি একসময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিল, পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করে জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের, সেই ছাত্ররাজনীতি আজ ক্ষমতার অপব্যবহারে কলুষিত।

তারা আরও বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে নিরীহ শিক্ষার্থীদের বারবার প্রাণ ঝরেছে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অপকর্মে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নৃশংস অত্যাচারে আবরার ফাহাদ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও আজ ১৩ আগস্ট, ২০২২ তারিখে সেমিনার হল বুয়েট অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতাদের আয়োজনে একটি ব্যানার দেখা যায়।

প্রেসটাইম২৪/রায়হান 

পাঠকের মন্তব্য