অভাবে সাংবাদিক আত্মহত্যা করলে দায় কার?
জাতির যে কোন দুর্যোগের সময় সবার আগে এগিয়ে এসেছে সাংবাদিকরাই। দেশের প্রয়োজনে জীবন দিতেও করেনি সামান্যতম কার্পণ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ জাতির অনেক ক্রান্তিকালে হাল ধরেছে তারা। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা তাদের মুল লক্ষ্য হওয়াতে এই পথ অবিরাম চলছে।
তাইতো এখনও সামাজে যেখানেই অন্যায় সেখানেই সাংবাদিকরা তাদের বলিষ্ঠ কন্ঠ ও কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন। জীবনের ঝুকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কখনো কখনো চড়ম নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তবুও থেমে নেই সংবাদ সংগ্রহের কাজ। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম ও ভোলায় সাংবাদিক নির্যাতন তার বড় উদাহরণ। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের অনিয়মের সংবাদ প্রচার করতে যেয়ে দুই জায়গায়ই সাংবাদিকরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে হচ্ছে.... সাংবাদিকরা সমাজের ঘটে যাওয়া যে অন্যায় গুলো তুলো ধরে সেটি কি তাদের ব্যক্তি স্বার্থে? অনেক সময় সরকারের কিছু ভুলের সমালোচনা করে সেটিও কি তাদের স্বার্থে? না কখনই না। কারণ একজন প্রকৃত নিষ্ঠাবান সাংবাদিক কখনো দেশের খারাপ চাইনা। তাইতো সবসময় জনগণের স্বার্থে সমাজের ঘটে যাওয়া অন্যায় গুলো তারা তুলে ধরেন। আপনারা হয়তো জানেন, সরকারের সকল সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে নজর দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এজন্য সরকারের কিছু সিদ্ধান্তে ভুল থেকে যায়। আর সাংবাদিকরা তারই সংশোধন কিংবা সমালোচনা করেন। এটি কিন্তু সাংবাদিকদের নিজের স্বার্থের জন্য নয়। জনগণের জন্য। আর সরকারের সাথে জড়িত কারো অনিয়ম বা দূর্নীতি যদি তুলে ধরা হয় সেটি সরকারের সমালোচনা বলে আমি মনে করি না। কারণ কোন দেশের সরকার প্রধান দুর্নীতি চান না?
এই সাংবাদিক যারা দেশের জন্য ভাবছেন, সমাজের ঘটে যাওয়া অপরাধ ও দুর্নীতি তুলে ধরতে যেয়ে জীবন দিচ্ছেন বা জীবনের ঝুঁকিতে থাকেন তাদের কথা কি কেউ ভাবেন? তাদের প্রতিষ্ঠান, সরকার ও জনগণ কি তাদের প্রতি আন্তরিক? উত্তর না। কখনো কখনো হয়তোবা শতকরা ১ ভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতি কিছুটা আন্তরিক। সেটিও কিন্তু সকল বিষয়ে নয়। সরকার তো বিষয়টিকে পাত্তাই দেন না। মাঝে মাঝে সরকার প্রধান কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে অনুদান দেন। সেটিও খুব সামান্য। পেতেও প্রয়োজন হয় অনেক লবিং। যেখানে ৯০ ভাগেরও বেশি সাংবাদিক বঞ্চিত।
সাংবাদিকরা তো আইন শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মত দেশের সেবায় কাজ করেন। অন্যরা রাষ্ট্রিয়ভাবে বিভিন্ন ভাতা সুযোগ-সুবিধা পেলেও গণমাধ্যম কর্মীদের বেলায় শূন্য। সাথে যে গণমাধ্যম কর্মীরা জীবনের সর্বোচ্চ ঝুকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজ করে তাদের জন্যই নেই জীবন ও চাকরির নিরাপত্তা?
"নষ্ট প্রেমিক যেমন প্রেমিকার দেহ ভোগের পর ছুরে ফেলে দেয়, সাংবাদিকদের কেন এমন করে ছুরে ফেলে দেওয়া হয়? রাষ্ট্র জনগণ সবাই প্রেমিকের বিচার চাই। আর সাংবাদিকদের যে ৮/১০ কখনও ১৫ বছর ধরে যৌবন ভোগের পর তাকে ছুরে ফেলে দেয় তার প্রতিষ্ঠান। এর বিচার কি তারা পান"। সমাজ বা রাষ্ট্র কি তাদের পাশে দাড়ায়? উত্তর না।
একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করবো:
সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেই বিনা নোটিশে এসএ টিভি থেকে ৩২ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই নিয়ে গত ৬ মাসে প্রতিষ্ঠানটি চাকরিচ্যুত করেছেন ৫২ জনকে। মানা হয়নি শ্রম আইন। পরিশোধ করা হয়নি তাদের বকেয়া বেতনসহ কোন পাওনা। বিশ্বব্যাপী এই মহামারির সময় এই চাকরিচ্যুতরা কি করবেন? কি খাবেন? কেউ কি খোঁজ নিয়েছে? উত্তর না।
এখন প্রশ্ন হলো যারা দেশের জন্য জীবন দিতে সামান্যতম কার্পণ্য করেন না। তারা কি নিজ পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করতে না পেরে আত্মহত্যা করবেন? করলেও এর দায় নিবেন কে? দায় কি সরকারের উপর বর্তায় না? প্রশ্ন আপনাদের কাছেই রইল।