ঝুঁকি সত্ত্বেও চলছে দেহব্যবসা
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পেশা দেহব্যবসার বাজার সব সময় মোটামুটি অপরিবর্তিতই থেকেছে। যুদ্ধ হলেও যৌনকর্মীদের অভুক্ত থাকার খুব বেশি নিদর্শন সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া যাবে না।
কিন্তু করোনা সংক্রমণের এই ভয়াবহতা যৌনকর্মীদের ব্যবসাতেও থাবা বসিয়েছে। পাশাপাশি, শারীরিক সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোয় এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশা আরো বেশি করে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এই বিপদ খদ্দেরের সাথে যৌনকর্মীদেরও।
পেটের দায়ে কাজে নামছেন যৌনকর্মীরা
যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস শহরের এক যৌনকর্মীর কথা জানাচ্ছে সংবাদসংস্থা এএফপি। ব্রুনো (ছদ্মনাম) ভালো বেতনের কোনো কাজ না পাওয়ায় দু’বছর আগে এই পেশায় আসেন। এই প্রথমবারের মতো নিজের খরচ চালাতে সমস্যা হচ্ছে তার। করোনা সংক্রমণের ভয় কমিয়েছে বাজারে দেহব্যবসার চাহিদা। তাই এখন ব্রুনোর ভরসা যা কিছু সঞ্চয় আছে সেটুকুই। সরকারপ্রদত্ত সাহায্য আরো অনেকের মতো ব্রুনোও পাচ্ছেন না।
কিন্তু বিপদের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও খদ্দেররা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বলে জানাচ্ছেন ব্রুনো। যৌনরোগের ঝুঁকি থাকায় এই পেশা এমনিতেই যে খুবই বিপজ্জনক, তা মানলেও এএফপিকে তিনি বলেন, “আমাকে ঝুঁকি নিতেই হবে, কারণ, এটাই আমার একমাত্র আয়।“
তিনি আরো বলেন, “উল্টোদিকের মানুষটি যে নিরাপদ থাকার সব চেষ্টা করছেন, তা আমি কীভাবে জানবো? আমার অবাকই লাগছে যে এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মানুষ আমার সাথে যোগাযোগ করছে।“
জার্মানিতে যেমন চিত্র
জার্মানিতে স্বনিযুক্ত কর্মীদের জন্য করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বিশেষ আর্থিক সহায়তার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। অন্যদিকে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করার পর সমস্ত যৌনপল্লি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, জার্মানির যৌনপল্লিতে কর্মরত বেশির ভাগ যৌনকর্মী স্বনির্ভর, স্বনিযুক্ত কর্মী হিসেবে সরকারকে তারা কর দিয়ে থাকেন। তাই কাগজে-কলমে এই আর্থিক সাহায্যের ওপর যৌনকর্মীদের অধিকার থাকলেও তা পাওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
বোখুম শহরে কর্মরত নিকোল (ছদ্মনাম) বলেন, “আমি আশাবাদী যে, কর্তৃপক্ষ আমার কাগজপত্রের ভিত্তিতে আমাকে সাহায্য করবে। তাহলে অবশেষে আমি একটা বাসা ভাড়া নিতে পারবো।“
নিকোলের মতো অনেক যৌনকর্মীই সঠিকভাবে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। তাই অনেক ক্ষেত্রেই সরকারী সহায়তা পেতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনেকেই লস এঞ্জেলেসের ব্রুনোর মতো ঝুঁকি উপেক্ষা করে রাস্তায় নামছেন কাজের খোঁজে।
সুজান ব্লায়ার-উইল্প জার্মানির ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ইরোটিক অ্যান্ড সেক্সুয়াল সার্ভিসেস প্রোভাইডার্স’ সংস্থার পক্ষে জানান যে, জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এই পেশার সাথে যুক্ত তিন থেকে চার শতাংশ। তিনি জনান, জার্মানিতে কর্মরত এক-দুই লাখ যৌনকর্মীর আশি শতাংশই অন্য দেশ থেকে আসা। তিনি বলেন, “এসব যৌনকর্মী এখানে কাজের আশায় এসেছিলেন, কিছু আয় করার স্বপ্নে এসেছিলেন। এখন তাদের অধ্যে কেউ কেউ কোনো বন্ধুর সাথে বা কোনো যৌনপল্লিতে থাকছেন। অনেকে নিজেদের দেশে ফিরতে পারলেও একটা বিশাল অংশ গৃহহীন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।“
এভাবেই আর্থিক অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটছে যৌনকর্মীদের।
প্রেসটাইম/ইএফ (এএফপি, রয়টার্স)